চোখের ছানি (Cataract) হলে মূলত এটি অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়, কারণ এটি সাধারণ ঘরোয়া উপায়ে পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। তবে, চোখের ছানি প্রতিরোধ বা প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় ও পরামর্শ অনুসরণ করা যেতে পারে।
ঘরোয়া পদ্ধতি ও যত্ন:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
ভিটামিন সি, ই, এবং বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন:
গাজর, পালংশাক, ব্রকোলি, আমলকী।
বাদাম ও সূর্যমুখীর বীজ।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ যেমন স্যামন এবং টুনা।
আমলকী এবং মধু
আমলকীর রস ও মধুর মিশ্রণ চোখের জন্য উপকারী হতে পারে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ খেতে পারেন।
রসুন
রসুন চোখের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে পারে। প্রতিদিন ২-৩ কোয়া রসুন চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
গোলাপজল ব্যবহার
গোলাপজল দিয়ে চোখ ধোয়ার মাধ্যমে চোখের ক্লান্তি দূর হতে পারে। এটি প্রতিদিন একবার বা দুইবার করা যেতে পারে।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম
চোখ ঘড়ির কাঁটার মতো এবং উল্টো দিকে ঘোরান।
দূরের জিনিসের দিকে মনোযোগ দিন।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন।
অতিরিক্ত সূর্যালোক থেকে চোখ রক্ষা করুন। রোদে যাওয়ার সময় সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
যদি ছানি গুরুতর হয় এবং দৃষ্টিশক্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে, তবে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করান। অপারেশনই এই রোগের স্থায়ী সমাধান।
২২। তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই, তিনি অদৃশ্য এবং দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।
২৩। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই
পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই
পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত; যারা তাঁর শরীক স্থির
করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র ও মহান।
২৪। তিনিই আল্লাহ, সৃজনকর্তা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই।
আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি
পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ফজিলতঃ
(১) যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ‘আউজু বিল্লাহিচ্ছামিয়িল আলিমিমিনাশ
শাইত্বানির রাজিম, পাঠ করার পর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে তার জন্য
সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা রহমতের দোয়া করবে। আবার সন্ধ্যায় পাঠ
করলে সকাল পর্যন্ত ঐ মর্তবা লাভ করবে এবং সে মারা গেলে শহীদের মৃত্যু
হাসিল হবে।
(২) হাদিসে আছে, “যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ‘আউ-যুবিল্লা-হি
চ্ছামি-য়িলয়ালী-মিমিনাশশাইত-ন রিরজী-ম’ পাঠ করার পর সূরা হাশরে শেষের তিন
আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সত্তর হাজার রহমতের ফেরেশতা
নিযুক্ত করে দিবেন। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত রহমতের জন্য দোয়া করবে। সেদিন সে
মারা গেলে শহিদের মৃত্যু হাসিল হবে । যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ
করবে, সে-ও সকাল পর্যন্ত এই মর্তবা লাভ করবে”। (সুবহানআল্লাহ)
(৩) সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠের ফজিলত তিরমিযি শরীফে হযরত মা’কাল ইবনে ইয়াসার (রাঃ) এর বর্ণিত রেওয়ায়েত ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : যে ব্যক্তি সকালে ৩ বার “আউযুবিল্লাহিস্সামিউল আলিমি মিনাশ শাইতোয়ানির রাজিম” পাঠ করার পর
“সুরা হাশরের সর্বশেষ তিন আয়াত পাঠ করিবে । আল্লাহ তায়ালা তাহার জন্য
৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিবেন,তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠকারীর জন্য
রহমতের দোয়া করবে। যেদিন এই আয়াত তিনটি পাঠ করিবে সেদিন পাঠকারী মারাগেলে
শহীদের মউত হাসিল করিবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করিবে সেও একই
মর্তবা লাভ করিবে। (সুবহানআল্লাহ)
“আর যখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে তখন শয়তান বলবে, “সত্যি বলতে কি
আল্লাহ তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করে ছিলেন তা সব সত্যি ছিল এবং আমি যেসব
ওয়াদা করেছিলাম তার মধ্য থেকে একটিও পুরা করিনি। তোমাদের ওপর আমার তো কোন
জোর ছিল না, আমি তোমাদের আমার পথের দিকে আহ্বান জানানো ছাড়া আর কিছুই করিনি
এবং তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলে। এখন আমার নিন্দাবাদ করো না,
নিজেরাই নিজেদের নিন্দাবাদ করো। এখানে না আমি তোমাদের অভিযোগের প্রতিকার
করতে পারি আর না তোমরা আমার। ইতিপূর্বে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর সার্বভৌম
ক্ষমতা ও কতৃত্বের শরীক করেছিলে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, এ ধরনের
জালেমদের জন্য তো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবধারিত।”
“অনুবাদ: পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের পালাক্রমে যাওয়া আসার মধ্যে সেই সমস্ত বুদ্ধিমান লোকদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন। “
আয়াত নং :-১৯১
” যেসমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব অবস্থায় আল্লাহকে
স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে ১, (তারা
আপনা আপনি বলে ওঠেঃ) “হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন
ভাবে সৃষ্টি করো নি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত।
কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো।২”
তাফসীর :
টিকা:১) অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিই যদি সে আল্লাহর প্রতি গাফিল না হয় এবং
বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনসমূহ বিবেক-বুদ্ধিহীন জন্তু-জানোয়ারের দৃষ্টিতে না
দেখে গভীর নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে দেখে ও সে সম্পর্কে
চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে প্রতিটি নিদর্শনের সাহায্যে অতি সহজে যথার্থ ও
চূড়ান্ত সত্যের দ্বারে পৌঁছতে পারে।
টিকা:২) বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনাকে গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করার পর এ
সত্য তার সামনে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এটি পুরোপুরি একটি জ্ঞানগর্ভ
ব্যবস্থাপনা। মহান আল্লাহ তাঁর যে সৃষ্টির মধ্যে নৈতিক অনুভূতি সৃষ্টি
করেছেন, যাকে বিশ্ব-জগতে কাজ করার স্বাধীন ক্ষমতা ও ইখতিয়ার দিয়েছেন এবং
জ্ঞান-বুদ্ধি ও সত্য-মিথ্যা এবং ভালো-মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা দিয়েছেন,
তাকে তার এ দুনিয়াবী জীবনের কার্যাবলীর জন্য কোন জবাবদিহি করতে হবে না এবং
সে ভালো কাজের জন্য পুরস্কার ও খারাপ কাজের জন্য শাস্তি পাবে না-এটা
সম্পূর্ণ একটি বুদ্ধি বিবেক বিরোধী কথা।
(৩:১৯২)
অনুবাদ: তুমি যাকে জাহান্নামে ফেলে দিয়েছো, তাকে আসলে বড়ই
লাঞ্ছনা ও অপমানের মধ্যে ঠেলে দিয়েছো এবং এহেন জালেমদের কোন সাহায্যকারী
হবে না।
(৩:১৯৩)
অনুবাদ: হে আমাদের মালিক! আমরা একজন আহ্বানকারীর আহ্বান শুনেছিলাম। তিনি
ঈমানের দিকে আহবান করছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমরা নিজেদের রবকে মেনে নাও।
আমরা তার আহবান গ্রহণ করেছি। কাজেই, হে আমাদের প্রভু! আমরা যেসব গোনাহ করছি
তা মাফ করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব অসৎবৃত্তি আছে সেগুলো আমাদের থেকে দূর
করে দাও এবং নেক লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করো।
(৩:১৯৪)
অনুবাদ: হে আমাদের রব! তোমার রসূলদের মাধ্যমে তুমি যেসব ওয়াদা করেছো
আমাদের সাথে, সেগুলো পূর্ণ করো এবং কিয়ামতের দিন আমাদের লাঞ্ছনার গর্তে
ফেলে দিয়ো না। নিঃসন্দেহে তুমি ওয়াদা খেলাপকারী নও।”
(৩:১৯৫)
অনুবাদ: জবাবে তাদের রব বললেনঃ “আমি তোমাদের কারো কর্মকাণ্ড নষ্ট করবো
না। পুরুষ হও বা নারী, তোমরা সবাই একই জাতির অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যারা আমার
জন্য নিজেদের স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করেছে এবং আমার পথে যাদেরকে নিজেদের ঘর
বাড়ি থেকে বের করে দেয়া ও কষ্ট দেয়া হয়েছে এবং যারা আমার জন্য লড়েছে ও
মারা গেছে, তাদের সমস্ত গোনাহ আমি মাফ করে দেবো এবং তাদেরকে এমন সব বাগানে
প্রবেশ করাবো যার নীচে দিয়ে ঝরণাধারা বয়ে চলবে। এসব হচ্ছে আল্লাহর কাছে
তাদের প্রতিদান এবং সবচেয়ে ভালো প্রতিদান আল্লাহর কাছেই আছে।”
(৩:১৯৬)
অনুবাদ: হে নবী! দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে আল্লাহর নাফরমান লোকদের চলাফেরা যেন তোমাকে ধোঁকায় ফেলে না দেয়।
(৩:১৯৭)
অনুবাদ: এটা নিছক কয়েক দিনের জীবনের সামান্য আনন্দ ফূর্তি মাত্র। তারপর এরা সবাই জাহান্নামে চলে যাবে, যা সবচেয়ে খারাপ স্থান।
(৩:১৯৮)
অনুবাদ: বিপরীত পক্ষে যারা নিজেদের রবকে ভয় করে জীবন যাপন করে তাদের
জন্য এমন সব বাগান রয়েছে, যার নীচে দিয়ে ঝরণাধারা বয়ে চলছে। সেখানে তারা
চিরদিন থাকবে। এ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য মেহমানদারীর সরঞ্জাম।
আর যা কিছু আল্লাহর কাছে আছে, নেক লোকদের জন্য তাই ভালো।
(৩:১৯৯)
অনুবাদ: আহলি কিতাবদের মধ্যেও এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহকে মানে
তোমাদের কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তার ওপর ঈমান আনে এবং এর আগে তাদের
নিজেদের কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছিল তার ওপরও ঈমান রাখে, যারা আল্লাহর
সামনে বিনত মস্তক এবং আল্লাহর আয়াতকে সামান্য দামে বিক্রি করে না। তাদের
প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে। আর তিনি হিসেব চুকিয়ে দেবার ব্যাপারে দেরী
করেন না।
(৩:২০০)
অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! সবরের পথ অবলম্বন করো, বাতিলপন্থীদের মোকাবিলায়
দৃঢ়তা দেখাও, হকের খেদমত করার জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং আল্লাহকে ভয় করতে
থাকো। আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হবে।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে প্রতিবেশী শিশুদের ইসলামিক শিক্ষা
দেওয়া ও কোরআন রাখায় এক উইঘুর নারীকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সময়
২ মিনিটে পড়ুন
চার বছর আগে এক মাঝরাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
ডব্লিউআইওএনের
খবরে বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ের চাংজি হুই স্বায়ত্তশাসিত জেলার মানাসি
কাউন্টির বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী হাসিয়াত এহমাত। ২০১৭ সালের মে মাসে চীনা
কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতার করার পর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
তাকে
নিয়ে প্রথম খবর প্রকাশ করেছিল রেডিও ফ্রি এশিয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য সাত ও গোপনীয়ভাবে
কোরআন রাখায় আরও সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে ওই নারীর।
মানাস কাউন্টির বাসিন্দাদের কাছ থেকে পুলিশ যখন ধর্মীয় গ্রন্থ জব্দ করছিল, তখন হাসিয়াত এহমাতের কাছে দুই কপি কোরআন পাওয়া গেছে।
পরে মাঝরাতে পুলিশ তার বাসায় ঢুকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এমনকি তাকে পোশাক বদলানো কিংবা প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নেওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়নি।
রেডিও
ফ্রি এশিয়া বলছে, উইঘুর ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়
ব্যক্তিদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছেন চীনা কর্তৃপক্ষ। ধর্মীয় উগ্রবাদ ও
সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে সংখ্যালঘুদের পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও একীভূত করতেই
এই দমনাভিযান বলে দাবি চীনাদের।
২০১৭
সাল থেকে ১৮ লাখ উইঘুর ও তুর্কি সংখ্যালঘুকে জিনজিয়াংয়ের বিভিন্ন
বন্দিশালায় আটক রাখা হয়েছে। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের নামে এসব মুসলমানদের
ওপর চরম নির্যাতন চালানো হয়েছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুর মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে বলেও দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
মহান আল্লাহ মানুষকে সব মাখলুকের ওপর মর্যাদা দিয়েছেন। তাদের সুন্দর
অবয়বে সৃষ্টি করেছেন, তাদের নিজেদের শরীরের যত্ন নেওয়ার আদেশ করেছেন এবং
শরীরের শক্তিকে অনর্থক ও গুনাহর কাজ থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কঠিন কিয়ামতের দিন মানুষকে তার শরীর কী কী কাজে ব্যয় করেছে সে ব্যাপারে
হিসাব দিতে হবে।
আবু বারজা আল-আসলামি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো
বান্দার পদদ্বয় (কিয়ামত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এই কয়টি বিষয়
সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবে—কিভাবে তার জীবনকালকে অতিবাহিত
করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কী আমল করেছে; কোথা থেকে তার ধন-সম্পদ
উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কী কী কাজে তার শরীর বিনাশ
করেছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)
অতএব বোঝা গেল মহান আল্লাহ প্রদত্ত এই শরীরেরও আমাদের ওপর কিছু অধিকার
রয়েছে। নিম্নে শরীরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার তুলে ধরা হলো—
এক. সুস্থ-সবল থাকার চেষ্টা করা : সুস্থ-সবল জীবনের
জন্য শরীরের যত্ন নেওয়া শরীরের হক। শরীরের সঠিক যত্ন না নিলে মানুষ অলস
হয়ে ওঠে, অথচ অলসতা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, শক্তিমান মুমিন
ব্যক্তি দুর্বল মুমিন ব্যক্তির তুলনায় উত্তম এবং আল্লাহর কাছে অধিক
প্রিয়। অবশ্য উভয়ের মধ্যে কল্যাণ আছে। তোমাদের জন্য উপকারী প্রতিটি উত্তম
কাজের প্রতি আগ্রহী হও এবং অলস বা গাফিল হয়ো না। কোনো কাজ তোমাকে পরাভূত
করলে তুমি বলো, আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন এবং নিজ মর্জিমাফিক করে রেখেছেন।
‘যদি’ শব্দ সম্পর্কে সাবধান থাকো। কেননা ‘যদি’ শয়তানের কর্মের পথ উন্মুক্ত
করে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৬৮)
দুই. পরিমিত খাবার : তবে সুস্থতা অর্জনে অধিক খাদ্য
গ্রহণ নয়। অধিক খাদ্য গ্রহণও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। বরং সুস্থ থাকার জন্য ও
মহান আল্লাহর ইবাদত করার জন্য মানুষের উচিত পরিমিত খাবার গ্রহণ করা,
যতটুকু খাবার তার সুস্থতার জন্য যথেষ্ট।
মিকদাম বিন মাদিকারিব (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে
শুনেছি, মানুষ পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো পাত্র ভর্তি করে না (যতটুকু খাদ্য
গ্রহণ করলে পেট ভরে, পাত্র থেকে ততটুকু খাদ্য ওঠানো কোনো ব্যক্তির জন্য
দূষণীয় নয়)। যতটুকু আহার করলে মেরুদণ্ড সোজা রাখা সম্ভব, ততটুকু খাদ্যই
কোনো ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। এর পরও যদি কোনো ব্যক্তির নফস (প্রবৃত্তি)
জয়যুক্ত হয়, তবে সে তার পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ
পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (ইবনে মাজাহ,
হাদিস : ৩৪৯)
তিন. শরীরের যত্ন নেওয়া : শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর
যত্ন নেওয়া শরীরের অধিকার। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন, যার মাথায় চুল আছে সে যেন এর যত্ন নেয়। (আবু দাউদ, হাদিস :
৪১৬৩)
চার. প্রয়োজনমতো বিশ্রাম করা : মাঝেমধ্যে শরীরকে
বিশ্রাম দেওয়া শরীরের অধিকার। শরীরের ওপর অমানবিক চাপ দেওয়া ইসলাম সমর্থন
করে না। আবুল আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে
শুনেছি, তিনি বলেন, নবী (সা.) আমাকে বলেন, আমাকে কি জানানো হয়নি যে তুমি
রাতভর ইবাদতে জেগে থাকো আর দিনভর সিয়াম পালন করো? আমি বললাম, হ্যাঁ, তা
আমি করে থাকি। তিনি ইরশাদ করলেন, এ কথা নিশ্চিত যে তুমি এমন করতে থাকলে
তোমার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তোমার
দেহের অধিকার রয়েছে, তোমার পরিবার-পরিজনেরও অধিকার রয়েছে। কাজেই তুমি
সিয়াম পালন করবে এবং বাদও দেবে। রাতে জেগে ইবাদত করবে এবং ঘুমাবেও।
(বুখারি, হাদিস : ১১৫৩)
পাঁচ. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি না করা : শরীরের
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা হারাম। কেননা মানুষ তার অঙ্গের মালিক নয়, বরং
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর আমানত। মহান আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেছেন। কেউ
চাইলে নিজের ইচ্ছায় এগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না, বিক্রিও করতে
পারবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি,
তাদের জন্য জলে-স্থলে যানবাহনের ব্যবস্থা করেছি, তাদের পবিত্র রিজিক
দিয়েছি আর আমি তাদের আমার বেশির ভাগ সৃষ্টির ওপর মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব দান
করেছি।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭০)
ছয়. হারাম না খাওয়া : শরীরের একটি অন্যতম হক হলো
হারাম ভক্ষণ থেকে বিরত থাকা। হারাম ভক্ষণ মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত
করে দেয়। হারাম ভক্ষণকারীর শরীর জাহান্নামে যাবে। আবু হুরায়রা (রা.)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা পবিত্র,
তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর
প্রেরিত রাসুলদের যে হুকুম দিয়েছেন, মুমিনদেরও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি
বলেছেন, ‘হে রাসুলরা! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার করো এবং ভালো কাজ
করো। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।’ (সুরা : আল মুমিনুন, আয়াত :
২৩-৫১)
তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, ‘তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোন! আমি তোমাদের যেসব
পবিত্র জিনিস রিজিক হিসেবে দিয়েছি, তা খাও।’ (সুরা : আল বাকারা, আয়াত :
১৭২)।
অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ
সফর করে। ফলে সে ধূলিধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের
দিকে হাত তুলে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয়
হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দোয়া
তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৩৬)
| পবিত্র কোরআনের হিফজ তথা মুখস্থ করা ইসলাম ধর্মে মর্যাদাপূর্ণ ও
অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এতে সাধারণত তিন বা চার বছর সময় লাগে। অবশ্য অনেক
মেধাবী ছেলে-মেয়েরা আরো কম সময়ে হেফজ সম্পন্ন করে। সাধারণত ৭-১৩ বছর বয়সের
মধ্যে ছেলে-মেয়েরা পবিত্র কোরআন হেফজ সম্পন্ন করে। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত
পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাঁদেরকে পড়াশোনা করতে হয়। আলজাজিরা নেটের এক
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০২ সালে তুরস্কে ১৬৭৭টি কোরআন হেফজের মাদরাসা
ছিল। এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ হাজার ৬৭৫-এ দাঁড়িয়েছে। তুরস্কের ধর্ম বিভাগের
তথ্য মতে, প্রতিবছর এসব মাদরাসায় ১৫ হাজারের বেশি হাফেজ কোরআন
মুখস্থ সম্পন্ন করে। তুরস্কে গত দুই দশকে মেয়েদের কোরআন শেখানোর উদ্দেশ্যে
অনেক মাদরাসা তৈরি হয়। পবিত্র কোরআনের হাফেজ হওয়ার বাসনায় মেয়েরা তাতে
আবাসিক থাকেন। নিজের ঘর-বাড়ি ও আত্মীয়দের ছেড়ে মাদরাসায় আবাসিক থাকা কষ্টকর
হলেও তা জীবনের বড় লক্ষ্য পূরণে সহায়ক। তুরস্কে মেয়েদের কোরআন হেফজ নিয়ে
ফরাসি দৈনিক লে মন্ডে পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে
শিক্ষার্থীদের কোরআন মুখস্থের পাশাপাশি অবসরে আনন্দ-বিনোদনের কথা তুলে ধরা
হয়। কারণ মুখস্থের মতো কঠিন কাজ সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য মনের উৎফুল্লতাও
অনেক প্রয়োজন। কোরআন শেখা তুর্কি মেয়েদের জীবনযাত্রা নিয়ে ‘হাফিজ : দ্য
গার্ডিয়ান অব কোরআন’ শিরোনামে তুরস্কের ফটো সাংবাদিক সাবিহা সাইমন একটি
প্রতিবেদন তৈরি করেন। তা ২০২০ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার লাভ করে।
মূলত তাঁর অধিকাংশ ফটোগ্রাফি মেয়েদের কোরআন হেফজের আবাসিক মাদরাসা নিয়ে
হওয়ায় তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদরাসার মেয়ে হেফজ শিক্ষার্থীদের অবসর সময়ে
আনন্দ-উচ্ছ্বাস উপভোগের চিত্র দিয়ে সাবিহা তাঁদের জীবনাচার বর্ণনা করেন।
মূলত এসব হেফজ মাদরাসায় প্রবেশে নানা রকম বিধি-নিষেধ আছে। কিন্তু ৩৫ বছর
বয়সী ফটো সাংবাদিক সাবিহা সাইমন আনাতোলিয়ার পাঁচটি শহর ঘুরে বিভিন্ন
মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটান এবং তাঁদের বর্ণিল জীবনচিত্র তুলে
ধরেন। ইস্তাম্বুলের অধিবাসী সাবিহা সাইমন বর্ণনা করেন, ‘১২ বছর বয়সে আমার
যমজ বোনের সঙ্গে একটি হেফজ মাদরাসায় পড়ি। তখন মাদরাসাটি ছিল খুবই ছোট।
পরবর্তী সময়ে আমার বোন পবিত্র কোরআনে হাফেজ হন।’ কোরআন মুখস্থ করা নারী
শিক্ষার্থীদের নিয়ে জীবনাচার তুলে ধরে সাবিহা ইসলামী সংস্কৃতির উজ্জ্বল দিক
তুলে ধরার প্রয়াস চালান, যা পশ্চিমা মিডিয়ায় অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে
উপস্থাপন করা হয়। মূলত তাঁদের জীবনাচারে তিনি নিজের শৈশবের প্রতিচ্ছবি
দেখতে পান। তাই নিজের জীবনের পুরনো চিত্রগুলোই যেন তিনি ক্যামেরাবন্দি
করেন। সাবিহা জানান, ‘মূলত সব কিছুই পুনরাবৃত্তির ওপর নির্ভর করে। তাই
যেকোনো বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্বের জন্য প্রথমে শব্দ মুখস্থ করতে হয়। এরপর তার
অর্থ বুঝতে অনেক বছর পড়াশোনা করতে হয়। তাই মানবজীবনে পবিত্র কোরআনের
নির্দেশনা অনুসরণ করতে প্রথমে তা মুখস্থ করা হয়। এরপর দীর্ঘকাল পড়াশোনা করে
তাঁরা এর মর্ম উপলব্ধি করেন। পবিত্র কোরআন মুখস্থের অনুশীলনের জন্য
শৃঙ্খলা, আত্মোৎসর্গ ও গভীর মনোযোগ প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।’ সাবিহা
সাইমন ১৯৮৬ সালে ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ বাড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা
লাভ করে হেফজ মাদরাসায় পড়েন। এরপর জর্দানে আরবি ভাষা শিখতে যান। নিজের মতো
করে ফটোগ্রাফি করেন। নারী, ইসলামী সংস্কৃতি ও স্থিরচিত্র নিয়ে কাজ করেন
তিনি। ইস্তাম্বুল বিলগি ইউনিভার্সিটি থেকে বৈদেশিক বাণিজ্য ও অর্থনীতি
বিষয়ে স্নাতক করেন। এরপর কালচারাল স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন।
তুরস্কে গত ২০ বছর যাবৎ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পৃষ্ঠপোষকতায়
নারীদের হেফজ মাদরাসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা যায়, মূলত ‘আদর্শ ও নিষ্ঠাবান
প্রজন্ম’ তৈরির বাসনা থেকে এরদোয়ান এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরদোয়ান নিজেও ইমাম
হাপি স্কুলে পড়াশোনা করেন। তাঁর বাবার ইচ্ছা ছিল তিনি একজন হাফেজ হবেন।
দীর্ঘকাল যাবৎ এরদোয়ান মুসলিম সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারে কাজ করছেন। ইসলাম
শিক্ষার প্রসার করে আদর্শ নাগরিক গড়ে তুলতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। যার সুফল বর্তমানে দৃশ্যমান। সূত্র : আলজাজিরা
নেট Source: Kalerkontho
“তারা তোমাকে রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলে দাও, রুহ আমার রবের
হুকুমঘটিত বিষয়। কিন্তু তোমরা সামান্য জ্ঞানই লাভ করেছ।”- [সুরা : বনি
ইসরাঈল, আয়াত : ৮৫ (প্রথম পর্ব)]
তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, মানুষ ব্যক্তিগত কাজকর্মে অভ্যাস ও
প্রথার অনুসরণ করে। প্রত্যেকে স্বভাব-প্রকৃতির অনুসরণ করে। মানুষের এই
কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে যত দিন তার দেহে রুহ বা প্রাণ থাকে। রুহের হকিকত
কী—আলোচ্য আয়াতে সে প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে অন্তত ২৩ বার
‘রুহ’ শব্দ এসেছে। বাংলা ভাষায় এর পরিচিত অর্থ হলো প্রাণ বা আত্মা। কোরআনে
রুহ শব্দ প্রধানত তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এক. ‘রুহ’ হলো সেই অলৌকিক বস্তু, যা মানুষের ভেতর ফুঁ দিয়ে প্রাণের
সঞ্চার করা হয়। যেমন—আলোচ্য আয়াতে রুহ বা প্রাণের হকিকত সম্পর্কে প্রশ্ন
করা হয়েছে।
দুই. রুহ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে জিবরাইল (আ.)-এর জন্য। অর্থাৎ কোরআনের
কোনো কোনো স্থানে রুহ মানে জিবরাইল (আ.)। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলে দাও, তোমার
রবের কাছ থেকে রুহুল কুদুস [জিবরাইল (আ.)] সত্যসহ কোরআন নাজিল করে…।’ (সুরা
: নাহল, আয়াত : ১০২)
তিন. কখনো কখনো রুহ শব্দ এসেছে কোরআন ও ওহি বোঝানোর জন্য। ইরশাদ হয়েছে,
‘এভাবেই আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি রুহ তথা আমার নির্দেশ। তুমি তো
মানতে না কিতাব কী এবং ঈমান কী…!’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৫২) দেখা যায়, যে তিনটি প্রসঙ্গে রুহ শব্দ এসেছে, প্রতিটি প্রসঙ্গই মানুষের জীবন ও মানবসমাজের প্রাণের উৎস।
রুহ এমন অশরীরী বস্তু, যা কারো দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু প্রত্যেক
প্রাণীর শক্তি ও সামর্থ্য এই রুহের মধ্যেই লুক্কায়িত। এর প্রকৃত স্বরূপ কেউ
জানে না। ইহুদি পণ্ডিতরা একবার নবী করিম (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিল।
তখনই আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয়। (বুখারি, সুরা বনি ইসরাঈলের তাফসির)
প্রশ্নকারীরা জানতে চেয়েছিল রুহ জিনিসটা আসলে কী বা কেমন? কোরআনে এ
প্রশ্নের তাত্ত্বিক জবাব দেওয়া হয়নি। শুধু এতটুকু বলে দেওয়া হয়েছে যে রুহ
বস্তুগত কিংবা অনুভবগ্রাহ্য কোনো জিনিস নয় যে তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারবে।
বরং রুহ সম্পূর্ণ অবস্তুগত একটি জিনিস, যা মহান আল্লাহর নির্দেশঘটিত।
রুহের হকিকত বেশির ভাগ মানুষের উপলব্ধিক্ষমতার বাইরে। এই বিশ্বভুবনের
সত্যাসত্য সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান খুবই সীমিত। উপলব্ধিক্ষমতাও যৎসামান্য। রুহের
হকিকত নিয়ে মানবসমাজে অনেক মতবিরোধ আছে। রুহ অতি সূক্ষ্ম একটি প্রাণী, যা
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে রক্ত, গোলাপ ফুলের মধ্যে পানি এবং জলপাইয়ের মধ্যে
তেল বিচরণ করার মতো বিচরণ করে। রুহের মাধ্যমেই দেহ জীবিত থাকে। রুহের
অবস্থানক্ষেত্র হচ্ছে দেহ। যখন দেহ থেকে রুহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন দেহ
থেকে প্রাণও চলে যায়। রুহ সৃষ্ট বস্তু। তবে দেহের মৃত্যুর কারণে রুহ
মৃত্যুবরণ করে না। রুহের দেহত্যাগ এবং দেহ থেকে রুহের বের হয়ে যাওয়াই
মৃত্যু। তবে রুহ নিঃশেষ হয় না, বরং দেহ ধ্বংস হওয়ার পরও তা অবশিষ্ট থেকে
যায়। এই রুহ হয়তো জান্নাতে অথবা জাহান্নামে স্থান পায়।
অনুবাদ: পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের পালাক্রমে যাওয়া আসার মধ্যে সেই সমস্ত বুদ্ধিমান লোকদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন –
অনুবাদ: যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব অবস্থায় আল্লাহকে
স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে, (তারা আপনা
আপনি বলে ওঠেঃ) “হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে
সৃষ্টি করো নি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত।
কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো।
অনুবাদ: তুমি যাকে জাহান্নামে ফেলে দিয়েছো, তাকে আসলে বড়ই লাঞ্ছনা ও
অপমানের মধ্যে ঠেলে দিয়েছো এবং এহেন জালেমদের কোন সাহায্যকারী হবে না।
অনুবাদ: হে আমাদের মালিক! আমরা একজন আহ্বানকারীর আহ্বান শুনেছিলাম। তিনি
ঈমানের দিকে আহবান করছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমরা নিজেদের রবকে মেনে নাও।
আমরা তার আহবান গ্রহণ করেছি। কাজেই, হে আমাদের প্রভু! আমরা যেসব গোনাহ করছি
তা মাফ করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব অসৎবৃত্তি আছে সেগুলো আমাদের থেকে দূর
করে দাও এবং নেক লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করো।
অনুবাদ: হে আমাদের রব! তোমার রসূলদের মাধ্যমে তুমি যেসব ওয়াদা করেছো
আমাদের সাথে, সেগুলো পূর্ণ করো এবং কিয়ামতের দিন আমাদের লাঞ্ছনার গর্তে
ফেলে দিয়ো না। নিঃসন্দেহে তুমি ওয়াদা খেলাপকারী নও।”
অনুবাদ: জবাবে তাদের রব বললেনঃ “আমি তোমাদের কারো কর্মকাণ্ড নষ্ট করবো
না। পুরুষ হও বা নারী, তোমরা সবাই একই জাতির অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যারা আমার
জন্য নিজেদের স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করেছে এবং আমার পথে যাদেরকে নিজেদের ঘর
বাড়ি থেকে বের করে দেয়া ও কষ্ট দেয়া হয়েছে এবং যারা আমার জন্য লড়েছে ও
মারা গেছে, তাদের সমস্ত গোনাহ আমি মাফ করে দেবো এবং তাদেরকে এমন সব বাগানে
প্রবেশ করাবো যার নীচে দিয়ে ঝরণাধারা বয়ে চলবে। এসব হচ্ছে আল্লাহর কাছে
তাদের প্রতিদান এবং সবচেয়ে ভালো প্রতিদান আল্লাহর কাছেই আছে।”
অনুবাদ: হে নবী! দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে আল্লাহর নাফরমান লোকদের চলাফেরা যেন তোমাকে ধোঁকায় ফেলে না দেয়।
অনুবাদ: এটা নিছক কয়েক দিনের জীবনের সামান্য আনন্দ ফূর্তি মাত্র। তারপর এরা সবাই জাহান্নামে চলে যাবে, যা সবচেয়ে খারাপ স্থান।
অনুবাদ: বিপরীত পক্ষে যারা নিজেদের রবকে ভয় করে জীবন যাপন করে তাদের
জন্য এমন সব বাগান রয়েছে, যার নীচে দিয়ে ঝরণাধারা বয়ে চলছে। সেখানে তারা
চিরদিন থাকবে। এ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য মেহমানদারীর সরঞ্জাম।
আর যা কিছু আল্লাহর কাছে আছে, নেক লোকদের জন্য তাই ভালো।
অনুবাদ: আহলি কিতাবদের মধ্যেও এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহকে মানে
তোমাদের কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তার ওপর ঈমান আনে এবং এর আগে তাদের
নিজেদের কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছিল তার ওপরও ঈমান রাখে, যারা আল্লাহর
সামনে বিনত মস্তক এবং আল্লাহর আয়াতকে সামান্য দামে বিক্রি করে না। তাদের
প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে। আর তিনি হিসেব চুকিয়ে দেবার ব্যাপারে দেরী
করেন না।
অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! সবরের পথ অবলম্বন করো, বাতিলপন্থীদের মোকাবিলায়
দৃঢ়তা দেখাও, হকের খেদমত করার জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং আল্লাহকে ভয় করতে
থাকো। আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হবে।